| Sign-Up

জয় বাংলা - বাংলার জয়। জয় বাংলা ৭১ (একাত্তর) www.JoyBangla71.com পোর্টালে আপনিও কলাম ও সংবাদ প্রকাশ করতে পারবেন। আপনার এলাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রকাশ করতে পারবেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের সব চেয়ে নির্মম অবস্থা বর্তমান সাংবাদিকতা। তাই আপনার এলাকার সংবাদ আপনি নিজেই প্রকাশ করুন।

কলাম

সাহসী লেখিকা তসলিমা নাসরিন

বর্তমান ইউসুন সরকার পাকিস্তানপন্থী – সাহসী লেখিকা তসলিমা নাসরিন

বাংলাদেশের সরকার পাকিস্তানপন্থী। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাত্তরে যে যুদ্ধ হয়েছিল, এই সরকার সেই মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না, সে কারণে ধূলিসাৎ করেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় সব জাদুঘর, ভাস্কর্য, স্মৃতি। আমার আশঙ্কা দেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস একুশে ফেব্রুয়ারির উৎসব ঘটা করে করবেন না, যদি করেনও, তা হবে নিতান্তই লোক দেখানো। বাংলাদেশের সর্বত্র এখন জিহাদি তাণ্ডব চলছে, জিহাদিরা সুফিদের যত মাজার ছিল দেশে, ভেঙে ফেলেছে। তারা কিন্তু চায় শহীদ মিনার গুঁড়ো করে ফেলতে, যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের নেতা শেখ মুজিবের ধানমন্ডি-৩২ নম্বর বাড়িটি গুঁড়ো করে ফেলেছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ইতিমধ্যে কোথাও মকর সংক্রান্তি করতে দেয়নি, বসন্ত উৎসব করতে দেয়নি, লালন স্মরণোৎসব করতে দেয়নি, বাউল মেলা করতে দেয়নি। এমনকী বিজয় দিবসও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথাযোগ্য সম্মানসহ পালন করতে দেয়নি। যে বাংলা ভাষার জন্য বাঙালি রক্ত দিয়েছিলেন ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে, সেই বাংলা ভাষাকে ভালবেসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানটিও আজ উচ্চারণ করা নিষেধ। এমন দমবন্ধকর পরিবেশে এবার একুশে ফেব্রুয়ারি বা ভাষা দিবস আদৌ মর্যাদার সঙ্গে পালন করা সম্ভব হবে কি না, এ নিয়ে ঘোর সংশয় আমার।
যাঁরা এখন বাংলাদেশের ক্ষমতায়, তাঁরা পাকিস্তানের সেই শাসকদের সামনে মাথা নোয়াচ্ছেন, যাঁরা ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করতে চেয়েছিলেন। অথচ পূর্ব আর পশ্চিম মিলিয়ে গোটা পাকিস্তানে বাংলাভাষীর সংখ্যাই ছিল অধিক। বাহান্নোর ভাষা সৈনিকদের জীবন দিতে হয়েছে কারণ তাঁরা উর্দু নয়, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই বলে মিছিলে নেমেছিলেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চেয়েছিলেন বলে তাঁদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানের স্বৈরশাসক। আজ বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সংস্কৃতির চেয়ে ইসলামী সংস্কৃতি বড় হয়ে উঠেছে। তারা সুদূর আরব দেশের আরবি ভাষাটিকে সারা বিশ্বের মুসলমানের ভাষা বলে বিশ্বাস করে, এবং উর্দুকে ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী মুসলমানের ভাষা বলে মনে করে। এরা ছলে বলে কৌশলে বাংলা ভাষার মধ্যে উর্দু এবং আরবি শব্দকে প্রবেশ করাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই চর্চা দু’দশক ধরে খুব জোরেসোরেই শুরু হয়েছে। আজ বাংলাদেশের অধিকাংশ বাঙালিই শুদ্ধ বাংলা বলতে, লিখতে এবং উচ্চারণ করতে অপারগ। ভাষার প্রতি ভালবাসা না থাকলে ধীরে ধীরে ভাষার মৃত্যু হয়। প্রতি দু’সপ্তাহে একটি করে ভাষার মৃত্যু হচ্ছে পৃথিবীতে। আমার আশংকা, সেদিনের হয়তো খুব বেশি দেরি নেই, যেদিন বাংলা ভাষারটির মৃত্যু হবে।
শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে ভাষাটি পেয়েছি, সেটি আমাদের মায়ের ভাষা। এই মায়ের ভাষাটিকে আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারবো একমাত্র অকৃত্রিম ভালবাসা দিয়ে। বিভিন্ন সরকারের অদূরদর্শিতা এবং ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার কারণে জিহাদি বা ধর্মীয় অপশক্তির উত্থান ঘটেছে। এই উত্থানকে প্রতিহত করার জন্য জরুরি ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ, একই সঙ্গে বাংলা সাহিত্য আর সংস্কৃতির বিকাশ। বাংলা ভাষা শুধু বাঙালি মুসলমানের ভাষা নয়। বাংলার হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান– আমরা সবাই বাঙালি। এই স্লোগানটি আমরা দিয়েছি মুক্তিযুদ্ধের সময়, এই স্লোগানটি আবার দরকার এখন, যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চলছে।

মন্তব্য করুন